সৌদি আরবে পড়াশোনার খরচ লাগে না

বাংলাদেশ থেকে অনেকেই বিভিন্ন দেশে উচ্চশিক্ষা নিতে যান। তাদের বেশিরভাগই ইউরোপ, আমেরিকা যেতে চান। কিন্তু এসব দেশে পড়াশোনার খরচ বেশি। যারা অল্প খরচে বিদেশি ডিগ্রি চান তারা যেতে পারেন সৌদি আরবে। দেশটিতে কম খরচ উচ্চশিক্ষা অর্জনের সুযোগ আছে।

সৌদি আরবের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতক, স্নাতকোত্তর ও পিএইচডি পর্যায়ে ভর্তির সুযোগ আছে। এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান শিক্ষা বৃত্তিও দেয়।

higher studyবৃত্তির আওতায় ইসলামিক ইউনিভার্সিটি, কিং সৌদ ইউনিভার্সিটি, ইমাম মুহাম্মাদ ইউনিভার্সিটি, তায়েফ ইউনিভার্সিটি, নর্দার্ন বর্ডার ইউনিভার্সিটিসহ বেশ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ থাকছে।

সৌদি আরবে পড়াশোনার জন্য প্রথমে দেশটির বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবি ভাষা শিক্ষা ইনস্টিটিউটে ভর্তি হতে হয়। ভাষা শিক্ষা ইনস্টিটিউটে সন্তোষজনক ফল অর্জিত হলে স্নাতক কোর্সে ভর্তির সুযোগ পাওয়া যায়।

সৌদি আরবের শিক্ষা ব্যবস্থা

সৌদি আরবের শিক্ষাব্যবস্থা মূলত কোরআন-সুন্নাহভিত্তিক। দেশটিতে সব ধরনের শিক্ষা অবৈতনিক। সব শিক্ষা উপকরণ বিনা মূল্যে সরবরাহ করা হয়। মক্কা নগর থেকে কিছুদূরে উম্মুল কুরা বিশ্ববিদ্যালয় অবস্থিত। এখানে ইসলামি শিক্ষার পাশাপাশি আধুনিক বিজ্ঞানভিত্তিক বিষয়ও পড়ানো হয়। আধুনিক ক্লাসরুম, সুপরিসর ক্যাম্পাস, অত্যাধুনিক লাইব্রেরি ও ল্যাবরেটরি, উন্নত হোস্টেল ব্যবস্থাপনা এবং গবেষণা উপযোগী সুন্দর পরিবেশের কারণে এই বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের কাছে বেশ পছন্দের।

সৌদি আরবে পড়াশোনার সুযোগ-সুবিধা

• বৃত্তি প্রাপ্ত শিক্ষার্থীদের জন্য বেতন ও পরীক্ষার ফি মওকুফ।

• বিশ্ববিদ্যালয় সমূহের কোন কোন বিভাগ ও ইনস্টিটিউট সমূহে সংশ্লিষ্ট বইপত্র বিনামূল্যে সরবরাহ করা হয়।

• যারা কোন প্রকার অকৃতকার্য হওয়া ছাড়াই পরীক্ষায় ‘মুমতাজ’ ফলাফল অর্জন করবে তাদেরকে নির্দিষ্ট সময়ে নির্দিষ্ট হারে অতিরিক্ত স্টাইপেন্ড প্রদান করা হয়ে থাকে, এবং তাদের জন্য থাকে পছন্দমত বিশ্ববিদ্যালয়ের উঁচু মানের বিষয় সমূহ বাছাই করে নেয়ার অধিকার ।

• বিশ্ববিদ্যালয় সমূহের নির্ধারিত রেষ্টুরেন্ট গুলোতে শিক্ষার্থীদের খাবারের বিলে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ নির্দিষ্ট হারে ভর্তুকি দিয়ে থাকে।

• বৃত্তি প্রাপ্ত শিক্ষার্থীদের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ফ্রি আবাসনের ব্যবস্থা করে থাকে। উম্মুল কোরা বিশ্ববিদ্যালয়ে বিবাহিতদের পরিবারসহ থাকার সুবিধার্থে ফ্রি আবাসন ব্যবস্থা রয়েছে।

• বৃত্তি প্রাপ্ত শিক্ষার্থীদের জন্য প্রতি মাসে নির্দিষ্ট হারে (অনার্স, মাস্টার্স, পি. এইচ. ডি.) স্তর অনুযায়ী স্টাইপেন্ডের ব্যবস্থা রয়েছে।

• বৃত্তি প্রাপ্ত শিক্ষার্থীদের জন্য রয়েছে প্রতি বছর বিনামূল্যে নিজ নিজ দেশ হতে ঘুরে আসার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ হতে যাওয়া ও আসার টিকিট।

• প্রয়োজন অনুযায়ী বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব হাসপাতাল ও সরকারি হাসপাতাল সমূহে বিনামূল্যে চিকিৎসা ও ঔষধের ব্যবস্থা রয়েছে।

• বৃত্তি বিভাগের পক্ষ হতে হজ্ব, ওমরা আদায় করানো হয় এবং বিভিন্ন সময় বিভিন্ন ঐতিহাসিক ও দর্শনীয় স্থান সমূহে শিক্ষা সফরে নিয়ে যাওয়া হয়।

• সৌদি আরবের আইন অনুযায়ী শিক্ষার্থীরা ‘ফ্যামিলি ভিসার’ জন্য আবেদন করতে পারবে ।

এছাড়াও সৌদি আরবে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিতরে ও বাহিরে রয়েছে বিভিন্ন সময়ে সহীহ দ্বীন, ঈমান আকিদা শিক্ষার বিভিন্ন কোর্স, দারস, যেখানে অনেক সময়েই সংশ্লিষ্ট কিতাব সমূহ বিনামূল্যে বিতরন করা হয়, কোন কোন সময় স্টাইপেন্ডর ব্যবস্থা এবং খাওয়া দাওয়া ও আবাসনের ব্যবস্থা থাকে।

আবেদনের শর্ত

আবেদনকারীর বয়স ১৭ থেকে ২৩ (কোনো কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে ২৫ বছর) বছরের মধ্যে হতে হবে। এইচএসসি/আলিমে ন্যূনতম জিপিএ ৪। কিছু বিশ্ববিদ্যালয়ে রেজাল্টের বিষয় স্পষ্ট করে বলা থাকে না। আবার কিছু বিশ্ববিদ্যালয়ে জিপিএ ৪.০০-এর কম হলেও আবেদন করা যায়।

আবেদন যেভাবে

আবেদনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ কাজ হলো প্রয়োজনীয় কাগজপত্র প্রস্তুত করা। আবেদন পিডিএফ ফরম্যাটে সর্বোচ্চ ২০০ কেবি সাইজের হতে হবে, পাসপোর্ট (কমপক্ষে দুই বছর মেয়াদ), পাসপোর্ট সাইজের ছবি (সাদা ব্যাকগ্রাউন্ডে টুপি ও চশমা ছাড়া), মেডিকেল ফিটনেসের সনদ (সিভিল সার্জন অথবা যেকোনো মেডিকেল সেন্টার থেকে), এইচএসসি/আলিম পরীক্ষার সার্টিফিকেট ও মার্কশিট অনুমোদিত অনুবাদ কেন্দ্র থেকে আরবি অনুবাদ করে নোটারি ও ইসলামিক ফাউন্ডেশন থেকে সত্যায়ন করাতে হবে। এরপর কাগজপত্র সংশ্লিষ্ট বোর্ড, শিক্ষা ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে সত্যায়ন এবং সর্বশেষ বাংলাদেশের সৌদি দূতাবাস থেকে সত্যায়ন করতে হবে। চারিত্রিক প্রশংসাপত্র (আবেদনকারীর নিজ দেশের ইসলামিক ফাউন্ডেশন অথবা দুজন বিশিষ্ট আলেম অথবা কলেজের শিক্ষকের কাছ থেকে নিতে হবে), হাফেজ হলে হিফজ সার্টিফিকেটও আরবি অনুবাদ ও নোটারি করতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ভেদে আরও কিছু কাগজপত্র লাগতে পারে। যেমন নাগরিকত্ব সনদ ও জন্মনিবন্ধন সনদের আরবি অনুবাদ ও নোটারি।